গাজীপুর মহানগরীর পূবাইল ৪১নং ওয়ার্ডের ভাদুন এলাকায় টিসিবির খাদ্যসামগ্রী বিতরণে ব্যাপক অনিয়ম দুর্নীতির অভিযোগ উঠেছে।
ওজনে কম দেওয়া, একই পরিবারে জনে জনে কার্ড ইস্যু করা, কার্ড ছাড়া মাল দেওয়া, প্রভাবশালীদের কার্ড ছাড়া মাল দেওয়া, কার্ডধারীদের মাল না দিয়ে খোলা বাজারে বিক্রি করে দেওয়া, সংখ্যা লঘুদের নামে বেশি করে কার্ড ইস্যু করা সর্বোপরি মালামাল নিতে আসা মহিলাদের অশ্লীল গালিগালাজসহ নানা অভিযোগ উঠেছে তাদের বিরুদ্ধে।
খোলাবাজারে বিক্রির উদ্দেশ্যে গত ১৮ ফেব্রুয়ারিতে ৪১নং ওয়ার্ডের খিলগাঁও স্কুলমাঠ থেকে সততা এন্টারপ্রাইজের ঠিকাদার একটি অটোরিকশা বোঝাই করে টিসিবির মালামাল সরাতে গিয়ে ধরা পড়েছে এমন ভিডিও ফুটেজ যুগান্তরের হাতে।
অন্যদিকে সিটি করপোরেশনের অধীনে নিয়োগপ্রাপ্ত ৪১নং ওয়ার্ড কাউন্সিলর অফিসের সচিব নিতাই সাহা বলছেন অন্যকথা। তিনি বলেন, কোন প্রকার অনিয়ম দূর্ণীতি হয়না। সুচারুভাবে বিতরণ হলেই আমি স্বাক্ষর করি বিতরণ সিট। সেটাই নির্দিষ্ট অফিসে জমা হয়। ভুক্তভোগীরা বলছেন সিটিকরপোরেশনের সচিবসহ ঠিকাদাররা মিলেমিশে সিন্ডিকেট করে টিসিবির খাদ্যসামগ্রী কার্ডধারীদের না দিয়ে খোলা বাজারে বিক্রি করে দিয়ে অঢেল টাকা হাতিয়ে নিচ্ছেন তারা।
শনিবার সকাল ৯ টা থেকে টিসিবি বিতরণ শুরু হয় নগরীর ৪১ নং ওয়ার্ডের ভাদুন উচ্চ বিদ্যালয় মাঠে। সরেজমিনে গিয়ে সেখানে দেখা যায় পুরুষ ও নারীদের পৃথক লাইনে মাল দেওয়ার কথা থাকলেও নারীদের লাইনে পুরুষদের দিতে দেখা যায়। এমনকি কেউ কেউ ৫ মিনিটের মধ্যেই মাল নিয়ে চলে যাচ্ছে লাইন ভঙ্গ করে। লাইন নিয়ে নারীদের মধ্যে ধাক্কাধাক্কি হচ্ছে এমন চিত্রও চোখে পড়েছে।
রোজার ১৪তম দিনের সকালে ৪১নং ওয়ার্ড এলাকায় ২০- ৩০ হাজার পরিবারের বিপরীতে সততার মালিক দিলরুবা বিতরণ করবে ৭০০ জনকে আর রিফাত এন্টারপ্রাইজ করবে ৪০৫ জনকে এমনটিই বলেছেন তারা। কিন্ত সকাল গড়িয়ে বিকাল হলেও দীর্ঘ লাইন ধরে নারী-পুরুষ অনেকে খোলা আকাশে প্রখর রোদে অপেক্ষমাণ রয়েছে। প্রতি পরিবারের জন্য বরাদ্দ ৫ কেজি চাল, ২ কেজি ডাল, ছোলা ১ কেজি, চিনি ১ কেজি যার মূল্য ৬১০ টাকা। অনেকে বলছেন পরিবারের পুরুষদের নামে কার্ড ইস্যু করা উচিত ছিল মহিলাদের নামে ইস্যু করে কষ্ট দেওয়া ঠিক না। অন্যদিকে সংখ্যা লঘুদের বেশি করে টিসিবির কার্ড ইস্যু করেছে সচিব হিন্দু হওয়ায় স্বজনপ্রীতি করেছে সে।
খুঁজ নিয়ে জানা যায়, নগরীর ৪১নং ওয়ার্ড এলাকায় আওয়ামী কোটায় সততা এন্টারপ্রাইজ ও রিফাত এন্টারপ্রাইজ নামে দুই ঠিকাদার টিসিবির খাদ্যসামগ্রী বিতরণের অনুমোদন পেয়েছিল ফ্যাসিস্ট আমলে। আর বেশিরভাগ ওয়ার্ড সচিবের নিয়োগও একই সময়ে একই কোটায়।
দীর্ঘ সময় লাইনে দাঁড়ানো বুড়ো নারী খাদিজা জানান সেহরি খেয়ে ফজরের নামাজের পর এসেও সামনে এগুতে পারছিনা। অনেকে লাইন ছাড়া নিয়ে যাচ্ছে। একই সময় দেখা যায় পূবাইল কাজী পাড়ার জোসনা নামে এক নারী অজ্ঞান হয়ে পড়লে অটো করে হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়। অনেকে কার্ড ছাড়াই পণ্য নিয়েছেন।
আমেনা নামে একজন বলছেন, মাপে কম দিচ্ছে সবাইকে। চাল ১০ কেজিতে ৪শ গ্রাম, ডাল এক কেজিতে ১ শ গ্রাম ছোলা দুই কেজিতে ১শ গ্রাম, চিনি এক কেজিতে ৫০ গ্রাম কম দিচ্ছে। শুধু তেল বোতলজাত করে দেয়ায় কম দেওয়ার সুযোগ নেই।
টিসিবির খাদ্যসামগ্রী বিতরণে ব্যাপক অনিয়ম দুর্ণীতি হচ্ছে এমন প্রশ্নের উত্তরে সততার ঠিকাদার মহিলালীগ নেত্রী দিলরুবা যুগান্তরকে জানান, সঠিকভাবে বিতরণ হচ্ছে কোন সমস্যা নাই যারা অভিযোগ করেছে তারা মিথ্যাচার করেছে।
রিফাত এন্টারপ্রাইজের রিফাত জানান, আমি কার্ড স্কেন করে ৪০৫ জনকে দেব যা এখনো শেষ হয়নি। আর অনিয়ম দুর্নীতি ওজনে কম দেওয়া এগুলো ঠিক বলেনি।