• শনিবার, ১৫ মার্চ ২০২৫, ০৭:৫৯ অপরাহ্ন
  • [gtranslate]

সংস্কার ছোট হলে নির্বাচন ডিসেম্বরে, বৃহত্তর হলে আগামী বছরের জুনে : ড. ইউনুস

স্টাফ রিপোর্টার / ২ Time View
আপডেট : শনিবার, ১৫ মার্চ, ২০২৫

বাংলাদেশের সংস্কার ও পরিবর্তন প্রক্রিয়ার সঙ্গে সংহতি প্রকাশ করেছেন সফররত জাতিসংঘ মহাসচিব আন্তোনিও গুতেরেস। তিনি ড. ইউনূসকে বলেন, আমি সংস্কার কর্মসূচির প্রতি আমাদের সম্পূর্ণ প্রতিশ্রুতি প্রকাশ করতে চাই। আমরা আপনাদের সংস্কার প্রচেষ্টাকে সমর্থন দিতে এখানে এসেছি। আমরা আপনাদের সর্বোত্তম সফলতা কামনা করি। যেকোনো সহযোগিতা লাগলে আমাদের জানান। তিনি আশাবাদ ব্যক্ত করেন যে এই সংস্কারপ্রক্রিয়া একটি অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচন এবং দেশের একটি ‘বাস্তব রূপান্তর’ নিশ্চিত করবে। তিনি বলেন, আমি জানি যে সংস্কারপ্রক্রিয়াটি জটিল হতে পারে।

জাতিসংঘের মহাসচিব আন্তোনিও গুতেরেস শুক্রবার ঢাকার তেজগাঁওয়ে প্রধান উপদেষ্টার কার্যালয়ে প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূসের সঙ্গে বৈঠক করেন। বৈঠকে বাংলাদেশে সংস্কার উদ্যোগের প্রতি জাতিসংঘের প্রতিশ্রুতি পুনর্ব্যক্ত করেন গুতেরেস। তিনি বিশ্বে ‘সবচেয়ে বৈষম্যের শিকার জনগোষ্ঠী’ রোহিঙ্গাদের দুর্দশা নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেন।

গুতেরেস বলেন, জোরপূর্বক বাস্তুচ্যুত মিয়ানমারের রোহিঙ্গাদের প্রতি সংহতি প্রকাশ করতে তিনি রমজান মাসে বাংলাদেশে এসেছেন। তিনি ১০ লাখের বেশি রোহিঙ্গা শরণার্থীর জন্য মানবিক সহায়তা কমে যাওয়ায় গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করে বলেন, পৃথিবীতে এতটা বৈষম্যের শিকার অন্য কোনো জনগোষ্ঠী আমি দেখিনি। তিনি বলেন, আন্তর্জাতিক সম্প্রদায় রোহিঙ্গাদের ভুলতে বসেছে।

‘মানবিক সহায়তা কমানো একটি অপরাধ’ উল্লেখ করে গুতেরেস বলেন, পশ্চিমা দেশগুলো এখন প্রতিরক্ষা খাতে ব্যয় দ্বিগুণ করছে, কিন্তু তখন আবার বিশ্বজুড়ে মানবিক সহায়তা সংকুচিত হচ্ছে।

রোহিঙ্গাদের আশ্রয় দেওয়ার জন্য বাংলাদেশের প্রতি জাতিসংঘের ‘অপরিসীম কৃতজ্ঞতা’ প্রকাশ করেন গুতেরেস। তিনি বলেন, বাংলাদেশ রোহিঙ্গাদের প্রতি অত্যন্ত উদারতা দেখিয়েছে। তিনি আরও বলেন, ‘রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠী আমার জন্য একটি বিশেষ বিষয়।

জাতিসংঘ মহাসচিব বলেন, তিনি রোহিঙ্গা সংকট সমাধানে সর্বোচ্চ চেষ্টা করবেন এবং তাদের জন্য সহায়তা সংগ্রহকে অগ্রাধিকার দেবেন।গুতেরেস বিশ্বশান্তি ও স্থিতিশীলতা রক্ষায় বাংলাদেশের শান্তিরক্ষী বাহিনীর ভূমিকার প্রশংসা করেন। বাংলাদেশের শান্তিরক্ষী বাহিনীর কার্যক্রম ‘অসাধারণ’ এবং বাংলাদেশ ন্যায়সংগত বিশ্ব প্রতিষ্ঠার অগ্রভাগে রয়েছে উল্লেখ করে জাতিসংঘ মহাসচিব বলেন, ‘বাংলাদেশের শান্তিরক্ষী বাহিনী আমাদের জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।

জাতিসংঘ মহাসচিব বলেন, আগের সরকারের রেখে যাওয়া অর্থনীতির ভঙ্গুর পরিস্থিতি তাকে ১৯৭৪ সালের পর্তুগালের বিপ্লবী দিনগুলোর কথা মনে করিয়ে দেয়। এদিকে, চলতি বছরের ডিসেম্বরে কিংবা আগামী বছরের জুনে জাতীয় সংসদ নির্বাচন হবে বলে জাতিসংঘ মহাসচিবকে জানিয়েছেন প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূস। তিনি বলেন, রাজনৈতিক দলগুলো যদি ‘সংক্ষিপ্ত সংস্কার প্যাকেজ’ নিয়ে একমত হয়, তবে নির্বাচন ডিসেম্বরেই হতে পারে। তবে তারা যদি ‘বৃহৎ সংস্কার প্যাকেজ’ গ্রহণ করে, তাহলে নির্বাচন আগামী বছরের জুনে অনুষ্ঠিত হবে।

প্রধান উপদেষ্টা বাংলাদেশে সংস্কারপ্রক্রিয়া সম্পর্কে জাতিসংঘের মহাসচিবকে অবহিত করেন। প্রধান উপদেষ্টা বলেন, অন্তর্বর্তী সরকারের গঠিত ছয়টি সংস্কার কমিশনের প্রতিবেদনের বিষয়ে ইতিমধ্যে প্রায় ১০টি রাজনৈতিক দল তাদের মতামত জমা দিয়েছে। তিনি বলেন, দলগুলো ৬টি কমিশনের সুপারিশগুলোর সঙ্গে একবার একমত হলে, তারা জুলাই সনদে স্বাক্ষর করবে; যা দেশের গণতান্ত্রিক উত্তরণের পাশাপাশি রাজনৈতিক, বিচারিক, নির্বাচনসংক্রান্ত, প্রশাসনিক, দুর্নীতি দমন ও পুলিশ সংস্কারের একটি রূপরেখা হবে।

অধ্যাপক ইউনূস বলেন, রাজনৈতিক দলগুলো যদি ‘সংক্ষিপ্ত সংস্কার প্যাকেজ’ নিয়ে একমত হয়, তবে নির্বাচন ডিসেম্বরেই হতে পারে। তবে, তারা যদি ‘বৃহৎ সংস্কার প্যাকেজ’ গ্রহণ করে, তাহলে নির্বাচন আগামী বছরের জুনে অনুষ্ঠিত হবে। প্রধান উপদেষ্টা ‘সুষ্ঠু, নিরপেক্ষ ও অংশগ্রহণমূলক নির্বাচন’ নিশ্চিত করার ব্যাপারে অঙ্গীকার পুনর্ব্যক্ত করেন।

বৈঠকে পররাষ্ট্র উপদেষ্টা তৌহিদ হোসেন, প্রধান উপদেষ্টার রোহিঙ্গা সমস্যা ও অগ্রাধিকারপ্রাপ্ত বিষয়াবলিসংক্রান্ত হাই রিপ্রেজেনটেটিভ খলিলুর রহমান এবং এসডিজি-বিষয়ক সিনিয়র সচিব লামিয়া মোরশেদ উপস্থিত ছিলেন।

জাতিসংঘের আন্ডার সেক্রেটারি জেনারেল রাবাব ফাতিমা ও বাংলাদেশে জাতিসংঘের আবাসিক সমন্বয়কারী গুইন লুইসও বৈঠকে উপস্থিত ছিলেন।


আপনার মতামত লিখুন :

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

বিভাগের আরোও সংবাদ
https://slotbet.online/