• Tue, ১৮ Mar ২০২৫, ০১:৪৪ পূর্বাহ্ন
  • [gtranslate]

শহিদ সায়েমের কবর ভাঙচুরের অভিযোগ আ.লীগ নেতাকর্মীদের বিরুদ্ধে

স্টাফ রিপোর্টার
আপডেট : শনিবার, ১৫ মার্চ, ২০২৫

বৈষম্যবিরোধী ছাত্র-জনতার আন্দোলনে শহিদ মো. সায়েম হোসেনের (১৭) কবর ভাঙচুর ও অবমননার ঘটনা ঘটেছে। হামলাকারীরা কবরের চারপাশের দেয়াল ও নামফলক ভেঙে ফেলেছে।

শুক্রবার দুপুরে দক্ষিণ কেরানীগঞ্জের আব্দুল্লাহপুর রসুলপুর কবরস্থানে এ ঘটনা ঘটে। এ ঘটনায় শনিবার ১৭ জনের নামোল্লেখ ও অজ্ঞাতনামা ৪০/৫০ জনকে আসামি করে মামলা করেছেন সায়েমের মা শিউলী আক্তার।

বাবা মায়ের একমাত্র সন্তান ছিলেন সায়েম হোসেন। বাবার বাড়ি বরগুনা জেলায় আর মায়ের বাড়ি দক্ষিণ কেরানীগঞ্জের আব্দুল্লাহপুর এলাকায়। পরিবার নিয়ে ভাড়া থাকতেন যাত্রাবাড়ীর কাজলা এলাকায়। বাবা কবির হোসেন টিটু পেশায় রড মিস্ত্রি। সায়েম হোসেন নবম শ্রেণি পর্যন্ত লেখাপড়া করেছেন। কাজ শিখতেন দোলাইরপাড়ের একটি ওয়ার্কশপে। ইচ্ছে ছিল কাজ শিখে বিদেশ যাওয়ার।

বাবা কবির হোসেন বলেন, ১৯ জুলাই বিকালে যাত্রাবাড়ী-কাজলা এলাকায় আন্দোলনে পুলিশের গুলিতে নিহত হয় সায়েম। গুলি মাথার সামনে দিয়ে ঢুকে পেছন দিয়ে বেরিয়ে যায়।

মা শিউলী আক্তার বলেন, ফ্যাসিস্ট সরকারের কারণে ওই সময় লাশ নিয়ে অনেক নাটক করে পুলিশ। লাশ গুম করার আশঙ্কা ছিল। তড়িঘড়ি করে আমার বাবার বাড়ির এলাকায় রসুলপুর কবরস্থানে লাশ দাফন করা হয়। আর আমরা পরিবার নিয়ে পালিয়ে থেকেছি।

পরে হাসিনা সরকারের পতনের পর ২৭ আগস্ট তিনি বাদী হয়ে ছেলে হত্যার বিচার চেয়ে রাজধানীর যাত্রাবাড়ী থানায় সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা, সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল ও যাত্রাবাড়ীর আওয়ামী লীগ ক্যাডার খলিলুর রহমানসহ ৭৭ জনের বিরুদ্ধে একটি হত্যা মামলা দায়ের করেন।

সায়েমের মা শিউলী আক্তার অভিযোগ করেন, ছেলের কবর পাকা করা হয়েছিল, নামফলকও ছিল। কিন্তু শুক্রবার দুপুরে আমি ফোন পেয়ে রসুলপুর কবরস্থানে গিয়ে দেখি একদল লোক ছেলের কবর ভেঙে ফেলেছে। তারা নাকি কবরে লাথি মেরে বলেছে, এখানে কোনো কবর থাকবে না। নিশ্চিহ্ন করে দেওয়া হবে।

তিনি আরও বলেন, হামলাকারীরা স্থানীয় আওয়ামী লীগের রাজনীতির সঙ্গে জড়িত। আমার ছেলে প্রাণ উৎসর্গ করে তাদের নেত্রী ফ্যাসিস্ট হাসিনার হাত থেকে দেশকে মুক্ত করেছে। এটা তারা মেনে নিতে পারছে না। তিনি অভিযোগ করেন, এজন্য ফ্যাসিস্টদের দোসরা এ হামলা করেছে। যারা একজন শহিদের কবর ভাঙচুর ও অবমাননা করেছে তাদের দ্রুত গ্রেফতার ও শাস্তির দাবি জানাই।

এদিকে ঘটনাটি দ্রুত সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়লে ছাত্র-জনতার মধ্যে ক্ষোভের সৃষ্টি হয়। ঘটনার প্রতিবাদ ও আসামিদের দ্রুত গ্রেফতার দাবিতে শনিবার বিকালে কেরানীগঞ্জের কদমতলী এলাকায় বিক্ষোভ করেছে কেরানীগঞ্জ উপজেলা বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন।

এ সময় উপস্থিত ছিলেন- বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলন কেন্দ্রীয় সমন্বয় ও জাতীয় নাগরিক পার্টির সদস্য আসাদ বিন রনি, কেরানীগঞ্জ উপজেলা বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলনের আহ্বায়ক আল আমিন মিনহাজ, কামরাঙ্গীরচর থানা বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলন আহ্বায়ক এবি প্রিতম।

কেরানীগঞ্জ বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলনের আহ্বায়ক আল আমিন মিনহাজ বলেন, সায়েম হোসেন একজন শহিদ। দেশের জন্য, গণতন্ত্রের জন্য জীবন দিয়েছেন। তার কবর ভাঙচুর ও অবমাননার সঙ্গে ফ্যাসিস্টদের দোসররা জড়িত। দ্রুত আসামিদের গ্রেফতার ও দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবি জানাই।

উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা রিনাত ফৌজিয়া শনিবার বিকালে বলেন, আমরা কবরস্থান পরিদর্শনে আছি। শহিদের কবরটি নতুন করে বাঁধানো হবে। যারা অপকর্মের সঙ্গে জড়িত হয়েছে, তাদের অবশ্যই আইনের আওতায় আনা হবে।

দক্ষিণ কেরানীগঞ্জ থানার ওসি মাজহারুল ইসলাম বলেন, আসামিদের গ্রেফতারে একাধিক অভিযান চলমান রয়েছে।


বিভাগের আরোও সংবাদ