আদালত বিচারাধীন বন্দীদের মধ্যে যাদের খালাস দেন তাদের সারাজীবন কলঙ্কের সাথে বসবাস করতে হয়। কারণ তারা কারাগারে ছিলেন। এই বিষয়টির উপর জোর দিয়ে ভারতের একটি সংসদীয় কমিটি সুপারিশ করেছে যে, বিচারাধীন বন্দীদের জন্য ‘আলাদা আটক কেন্দ্র’ করা যেতে পারে।
সংসদীয় কমিটি স্বরাষ্ট্র মন্ত্রককে জানিয়েছে, বিচারাধীন বন্দীদের কট্টর অপরাধীদের সাথে কারাগারে রাখা উচিত নয় বরং পৃথক আটক কেন্দ্রে রাখা উচিত যাতে তারা কট্টর অপরাধী তৈরি না হয়ে যায়। কমিটির মতে, এই কেন্দ্রগুলিকে কারাগার বলা উচিত হবে না।বরং সংশোধন কেন্দ্র বা আটক কেন্দ্র বলা যেতে পারে। কারাগারগুলি কেবল কঠোর সাজাপ্রাপ্ত অপরাধীদের থাকার জন্য ব্যবহার করা উচিত।
বিজেপির সিনিয়র সাংসদ রাধামোহন দাস আগরওয়ালের নেতৃত্বে স্বরাষ্ট্র বিষয়ক সংসদীয় স্থায়ী কমিটি কর্তৃক উপস্থাপিত স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের অনুদানের দাবি (২০২৫-২৬) সম্পর্কিত প্রতিবেদনের অংশ হিসেবে এই সুপারিশ করা হয়েছে।
ভারতের প্রায় ৭৫ শতাংশ বন্দী বিচারাধীন, যা ইঙ্গিত দেয় যে, তাদের ‘মামলা দীর্ঘ সময় ধরে বিচারাধীন’। কমিটি জানিয়েছে, অনেক ক্ষেত্রে দেখা গেছে যে এই বিচারাধীন বন্দীরা দীর্ঘ সময় জেলে থাকার পরে খালাস পেয়ে যায়। তখন তাদের কারাগারে থাকার জন্য হীনমন্যতায় ভুগতে হয়। কমিটির মতে,কারাগারে বিচারাধীন বন্দীদের ক্ষেত্রে প্রযোজ্য নিয়মকানুন কমবেশি সাজাপ্রাপ্ত অপরাধীদের মতোই।
সংসদীয় কমিটি মনে করে, কম মাত্রার অপরাধ বা ছোটখাটো অপরাধের জন্য কারাগারে থাকা বিচারাধীন বন্দীদের সাজাপ্রাপ্ত কট্টর অপরাধীদের সাথে মিশে যাওয়ার কারণে কারাগারগুলি জঘন্য অপরাধ সংঘটনের নার্সারি এবং প্রশিক্ষণ কেন্দ্রে পরিণত হচ্ছে। এর প্রধান কারণ হল, বিচারাধীন এবং জঘন্য অপরাধীদের একই কারাগারে রাখা হয়।
তবে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রক সংসদীয় কমিটিকে জানিয়েছে যে, মডেল প্রিজন ম্যানুয়াল, ২০১৬ এবং মডেল প্রিজন অ্যান্ড কারেকশনাল সার্ভিসেস, আইন অনুসারে বিচারাধীন এবং দোষী সাব্যস্ত বন্দীদের আলাদাভাবে রাখতে হবে। বিধি অনুসারে, উচ্চ ঝুঁকিপূর্ণ বন্দীদের আলাদা কারাগারে রাখার ব্যবস্থা করা হয়।
স্বরাষ্ট্র মন্ত্রক আরও জানিয়েছে যে, ভারতীয় নাগরিক সুরক্ষা সংহিতা, ২০২৩-এ বিচারাধীন বন্দীদের মুক্তির বিধান রয়েছে। যারা তাদের সর্বোচ্চ সাজার অর্ধেক বা প্রথমবার অপরাধীদের ক্ষেত্রে এক-তৃতীয়াংশ সাজা ভোগ করেছেন তাদের মুক্তি দেবার কথা বলা হয়েছে। গত বছরের ২৬ নভেম্বর স্বরাষ্ট্র মন্ত্রক এই বিধানগুলির বাস্তবায়ন নিশ্চিত করার জন্য একটি বিশেষ অভিযান শুরু করে, যার ফলে ৯৩৩ জন জামিনের আবেদন দাখিল করেছেন এবং ৩৩৬ জন যোগ্য বন্দীকে মুক্তি দেওয়া হয়েছে।